মেহেরপুরে বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে গ্রামপুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ০১নং ওয়ার্ড নিশিপুর গ্রামে।
এমন অভিযোগে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ(চৌকিদার) ওরির উদ্দীনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম(৩৫),খেড়ু মন্ডলের ছেলে এনামুল(৩০),আবুল কাশেমের ছেলে দেলোয়ার(৪০), ও ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী রেজিয়া খাতুন জানান, আমাকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার নাম করে জাহিদুল চৌকিদার ও এনামুল এসে ২হাজার টাকা নিয়েছে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বলে কলমের খোঁচা মেরে আমার নাম কেটে দেবে। প্রতিবন্ধী কার্ড পাওয়ার আশায় আমি ২হাজার টাকা তাদের দিয়েছি।এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কার্ড করে দেয়নি।
বিধবার জান্নাতি খাতুন জানান, আমার কাছে এনামুল ও জাহিদুল চৌকিদার এসে ৩’শ টাকা দাবি করে,তারা বলে এই টাকা অফিসে লাগবে যদি টাকা না দিই তাহলে আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হবে।তাই এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের আমি এ টাকা দিয়েছি।
০১নং ভারপ্রাপ্ত ইউপি সদস্য শাহনেওয়াজ লালটু জানান, কয়েকদিন ধরে আমার ওয়ার্ডের বয়স্ক,বিধবা,প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার নাম করে ১২০ জন ব্যক্তির কাছে তারা মোটা অংকের অর্থ নিয়েছে। শনিবার(১১সেপ্টেম্বর) রাতে স্থানীয়রা গ্রাম পুলিশ জাহিদুল ও এনামুলকে হাতেনাতে ধরলে এক পর্যায়ে তারা অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেন।
স্থানীয় মৃত গরীবুল্লাহ ছেলে ইউনুস আলী জানান, চেয়ারম্যানের অত্যন্ত কাছের মানুষ দেলোয়ার হোসেন কে সাথে নিয়ে এই অর্থ-বাণিজ্য করে যাচ্ছে চেয়ারম্যান সাহেব। আমরা বার-বার মুখ খুললেও বর্তমানে নিরুপায়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক এটাই আমাদের সর্বশেষ দাবি।
অভিযুক্ত দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমি ইউনিয়ন পরিষদের কেউ না। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
বিষয়ে অভিযুক্ত এনামুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি তাদের জন্য কষ্ট করেছি, তারা পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা আমাকে দিয়েছেন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়েছি, ডাক্তারের সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য মেহেরপুরে হাসপাতালে গিয়েছি এতে আমার খরচ হয়েছে তাই আমি এই টাকা নিয়েছি।তিনি আরো বলেন আপনাদের যা খুশি লেখেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
গ্রাম পুলিশ(চৌকিদার) জাহিদুল ইসলাম জানান,আমি বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের নাম তালিকা ধরে তাদের বাড়িতে বাড়িতে যাই। এ সময় চেয়ারম্যান সাহেবের লোক দেলোয়ার হোসেন জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে নামের লিস্ট কেড়ে নেয় এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ নিতে আমাকে বাধ্য করায়। আমি সামান্য চৌকিদার আমার এত বড় ক্ষমতা হয়ে ওঠে না যে মানুষের কাছ থেকে গিয়ে টাকা নিব।
বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান,দেলোয়ার ইউনিয়ন পরিষদের কেউ না যদি সে এমন করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এলাকাবাসীর অভিযোগ দেলোয়ার আপনার নিজের কাছের লোক এমন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান,বিষয়টি আমার জানা নেই, যদি ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।