কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ২৬ টি অবৈধ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরকারী বিধি অনুযায়ী এসকল ইটভাটার কোন সরকারী অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফসলী কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটাগুলো।
এসকল অবৈধ ইট ভাটা বছরের পর বছর অনায়াসে চলছে কোন প্রকার বাধা বিপত্তি ছাড়াই অন্যদিকে বছরের শুরুতে চাপে পড় স্থানিয় প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে তাদের দায় সারে, প্রক্ষান্তরে সারা বছর তারা চোখে পরে থাকে টিনের চশমা।
গণমাধ্যম কর্মীর বার বার এ সকল বিষয়ে লেখালেখি করলেও পরে প্রশাসনের দিক থেকে নেয়া হয়না কোন প্রকার কার্যকরী ব্যাবস্থা।
উপজেলায় মোট ২৬ টি ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ এবং তা আবাসিক ও তিন ফসলি আবাদি জমিতে, এসকল অবৈধ ইটভাটা কিভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে তা নিয়েও এলাকাবাসীর মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন?
অন্যদিকে ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনে কয়েক শতাধিক শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দৌলতপুরের সড়কগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এইসব অবৈধ গাড়ির ধাক্কায় ঘটছে মৃত্যুর মতো ঘটনা, এবং আহতের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য।
উপজেলার ২৬ টি ইটভাটাগুলো হলো হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আল সালেহ মামুন, হজমুদ্দিনের ছেলে ইদবার আলী, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আনারুল ইসলাম, স্বরুপপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে আবু বক্কর অবৈধভাবে সাদিপুর গ্রামেই ফসলি জমিতে জনবসতি এলাকায় চারটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। পার্শ্ববর্তী স্বরুপপুর গ্রামে মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও বজলুর রহমান এবং ইয়াকুব হালসানার ছেলে নুরুল ইসলাম তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। ফলে এই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সম্পুর্ণ আবাদি জমিতে ইয়াছিন আলী ও আব্দুল্লাহ, খান পাড়ায় জল্লাদ খান তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। দৌলতপুর কলেজ ও দাখিল মাদ্রাসার পাশে আব্দুল হান্নান ও চক দৌলতপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে রমজান আলী, দৌলতপুর থানার পুর্বপাশে অর্পিত সম্পত্তিতে নজরুল ইসলাম, রিফাইতপুর জোয়াদ্দার পাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলাম ওলি, পাশ্ববর্তী গলাকাটি মোড়ে ঝুমুর আলী, আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম, নতুন ঝাউদিয়াতে জলিল সর্দার, বড়গাংদিয়ায় হাবলু মোল্লা, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, জয়রামপুরে কান্টু মোল্লা, ডাংমড়কায় কুষ্টিয়া প্রাগপুর সড়কের সাথে আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছন।
কৃষক মেহেরুল জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোন ফসলের আবাদ করতে পারছেন না।
উপজেলার ২৬ টি ইটভাটা ব্যবসায়ী দিনে ও রাতের আধারে ড্রাম ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত স্টিয়ারিং, ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন।
জানাযায়, এ সকল ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে অন্যদিকে জনবসতি এলাকায় অসংখ্য ইটভাটার ফলে সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
দৌলতপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচএ ডাঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোয়ায় বাতাসে কার্বণ বৃদ্ধি পায়। এবং তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হবে। এলাকাবাসী জানায়, ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আতাউর রহমান জানান, কোন ইটভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। খুব শীঘ্রই এসকল অবৈধ ইটভাটা গুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আলালত পরিচালনা করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা আরো জোরদার করা হবে।