দেশের প্রায় সব জেলায় বেড়েছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। অনেক এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসল। যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে আলু। দেখা গেছে, বাজারে সবজির দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা। শুধুমাত্র আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে। এই অবস্থায় ক্রেতারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের মরণ ছাড়া আর উপায় থাকবে না। এদিকে মাংসের দাম বেশি হওয়ায় আগের মতো ক্রেতা নেই। গরুর মাংস কিছুটা বিক্রি হলেও, খাসির মাংসের ক্রেতা খুবই কম। একটি খাসি কাটলে বিক্রি হতে পেরিয়ে যায় দিন। মিরপুর পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার বিসমিল্লাহ্ মাংস বিতানের মালিক ফরিদুল ইসলাম বলেন, আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে দুই-একটা গরুর মাংস এক বেলাতেই বিক্রি হয়ে যেত। এখন সারাদিনে ছোট গরুর অর্ধেকই বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন গরুর বা খাসির মাংস কেনে না। অতিরিক্ত দামের কারণে খাসির মাংস বিক্রি বলতে গেলে বন্ধই করে দিয়েছি। শুক্রবার (২০ মে) সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কচুরমুখী ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, ঢেঁড়স, পটল ও ঝিঙা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। সোনালি, পাকিস্তানি ৩১০ এবং লেয়ার কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি। পাশাপাশি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম। বাড্ডা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। মানুষের আয় কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো না। বাজারের অবস্থাও যদি এমন ঊর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে আমরা বাজার করব কী করে? আমাদের সংসার চলবে কী করে? বাড্ডা এলাকার পাঁচতলা বাজারে এসেছেন সেলিনা বেগম। তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে বাসায় কাজ করতে পারেন না। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম স্বামী দিনমজুর। সারাদিন কাজ করে রোজগারের ৫০০ টাকা চাল-ডাল কিনতেই চলে যায়। সবধরনের সবজির দাম বেশি হওয়ায় বাজারে এসে খুঁজতে হয় কমদামি সবজি। রাজধানীর মহাখালী এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে গরু-খাসির মাংস বিক্রি করেন আলম মিয়া। বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের চেয়ে আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে। এত টাকা দিয়ে মানুষ মাংস কিনে খেতে চায় না। মাংসের দাম বাড়তি থাকলে আমাদের লোকসান হয়। কারণ ক্রেতা কমে যায়। বর্তমানে ৬৮০ টাকা কেজিতে মাংস কিনে খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তিনি আরও বলেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, দোকানের বাজার, গরু কেনাসহ নানা খরচ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে গেছে। খাসির মাংস ৯০০/ ৯৫০ টাকা বিক্রি করতে হয়। ফলে ক্রেতা পাই না বললেই চলে। তাই খাসির মাংস বিক্রি ছেড়েই দিয়েছি। রাজধানী মালিবাগ এলাকার মাংস বিক্রেতা ইয়াছিন আলী বলেন, গরু কিনে দোকান পর্যন্ত আনতে অনেক ধরনের চাঁদা বা বাজার খরচ দিতে হয়। কিন্তু মাংসের দাম বেশি হওয়ার কারণে বর্তমানে বিক্রি অনেক কমে গেছে। এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দাম বাঁড়ায় আমাদের কোনো লাভ নেই, বরং ক্ষতি। দাম বাড়তি থাকলে মানুষ মাংস খুব কম কেনে। ব্যবসায়ীরা তাদের মাল বিক্রি করতে পারেন না। এতে করে আমাদের লোকসান হয়। কারণ, আমরা ক্রেতা তেমন পাচ্ছি না। বিক্রিও অনেক কম। এসব কারণে রাজধানীর অনেক ছোট ছোট মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর থেকেই কাঁচা সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এরপর আবার বৃষ্টির কারণেও বাজারে তেমন সবজি আসছে না। আসতে গেলে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেকারণে প্রতি কেজি সবজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে খুচরা বাজারে। বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেলে বাজারে সবজি কমে যায়। বিভিন্ন জেলা থেকেও এই সময়ে সবজি আসতে পারে না। তাই সব সবজিরই এখন দামটা বেশি। মহাখালী কাঁচাবাজারে এসেছেন গার্মেন্টস কর্মী সুলতান আহমেদ। মাংস কেনা হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে শুধুমাত্র ঈদের সময় গরুর মাংস কিনেছিলাম ৭৫০ টাকা কেজিতে। এরপর আর কেনা হয়নি। আর খাসির মাংস কিনে খাওয়ার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। তিনি বলেন, আজ ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। তাও প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১৬০ টাকা। বাজারে সব জিনিসের দামই বাড়তি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের কিনে খাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।