কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজে মুখোমুখি ছাত্রলীগ ও অধ্যক্ষ। নানা ঘটনায় অস্থির ক্যাম্পাস, গাড়ী ভাঙচুর ও আন্দোলন। ছাত্রদের দাবি, দেয়া হয়েছে গুলি করার হুমকিও।
তবে সিসিটিভি’র আওতাভুক্ত ক্যাম্পাসে অস্ত্র প্রদর্শন বা ব্যবহারের কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।
বুধবার সকালে এসব ঘটনা ঘটলে দৌলতপুর থানা পুলিশ ও ভেড়ামারা সার্কেল কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়, তবে এঘটনায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি হয়নি। বিকাল চারটার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ কর্মকর্তা ও শিক্ষকেরা।
বিলাসবহুল যে গাড়িটি ভাঙা হয়েছে তার চালক রকি শেখ জানান, শিক্ষার্থীরা, ছাত্রলীগের কর্মীরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দরজায় তালা মারা থাকায় প্রবেশ করতে না পেরে, বিক্ষুব্ধ হয়ে বাইরে থাকা গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন বলেন, দৌলতপুর কলেজ খুলনা বিভাগের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃত স্বীকৃত একমাত্র ‘মডেল কলেজ’, এটি নষ্ট করতে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা উঠে পড়ে লেগেছে। আজ সকালে আমি নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারি কলেজে বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে, পরে কলেজে এসে পুলিশকে ফোন করে ডাকি এবং কলেজের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়া বহিরাগতদের বেরিয়ে যেতে। পুরো সময়টা আমি আমার অফিস কক্ষে বসেই সিসি টিভিতে পর্যবেক্ষণ করি। আমার সাথে কারো কোনো বাকবিতন্ডা বা কথাবার্তা হয়নি।
দৌলতপুর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নান্টু মিঞা সহ উপস্থিত ছাত্ররা জানিয়েছে, কলেজ শাখা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে, আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে কর্মসূচি, ক্যান্টিন তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে নেয়া অতিরিক্ত ভর্তি ফি সহ বিভিন্ন ফি বেশি নেয়ার বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করার জন্য ক্যাম্পাসে জড়ো হই। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে অধ্যক্ষের সহযোগী রাজুসহ দু’তিনজন এসে আমাদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না বলে জানায়, উচ্চবাচ্য করতে থাকে, গুলি করার হুমকিও দেয় কথোপকথনের সময়। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তারা দৌড়ে ওপরে উঠে যায়, এসময় দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমানুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন সহ উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলো। খবর পেয়ে সিনিয়র নেতারাও ক্যাম্পাসে আসেন দুএকজন। বিক্ষুব্ধরা কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা অধ্যক্ষের একটি বিলাসবহুল গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে।
সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট নেতারা অধ্যক্ষের কাছে মার মুখি ভঙ্গিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, শিক্ষার্থীরা জানায় তার কাছে পৌঁছাতে না পারায় দাবি দাওয়া উপস্থাপন করা যায়নি। বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীরা বিকাল পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করে, বিভিন্ন সময় সাংগঠনিক আন্দোলনের স্লোগান দেয়। এসব ঘটনার সময় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দরজা তালাবদ্ধ রেখে অধ্যক্ষ ছিলেন তাঁর নিজ কক্ষে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে দৌলতপুরের সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তৎপরতা চলবে বলে জানায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আল মুরাদ (ভেড়ামারা সার্কেল) -এর মধ্যস্ততায় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর আগেই বেরিয়ে যান সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা।
পুলিশ কর্মকর্তা মহসীন আল মুরাদ জানান, এখানে হট্টগোলের সম্ভাবনা আছে খবর পেয়ে আগেই দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে। পরে আমরাও আসি। আমরা আসার আগেই এখানে কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনাও ঘটে গেছে, দু’পক্ষের বাকবিতন্ডা হয়েছে। আমরা সব পর্যবেক্ষণ করেছি। তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি, উভয় পক্ষেরই কমবেশি অভিযোগ রয়েছে, জানিয়েছি তাদের পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ দেয়ার থাকলে আমাদের কাছে এসে জমা দিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়াগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মন্ত্রনালয়ে জানাতে পরামর্শ দিয়েছি। এই অভিযোগ গুলো প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাজ করার জন্য না।
অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারও। অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন ও দক্ষতা উন্নয়নের নানা উপাদান দৌলতপুর কলেজে অধ্যক্ষ সুমনের হাত ধরে আসলেও কলেজটি নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠে বিভিন্ন সময়।
নান্দনিক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক দৌলতপুরের অভিভাবকদের আস্থা ও নিরাপত্তার জায়গা, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।