কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের আল্লারদর্গায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশ বরেণ্য শিল্পপতি ও নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের কর্ণধার নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় আল্লারদর্গা সোনাইকুন্ডি ইদ্রিস আলী বিশ্বাস ইসলামিয়া মাদ্রাসার কবরস্থান মাঠে জানাজা শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
মরহুম নাসির উদ্দিন বিশ্বাস দৌলতপুর উপজেলার আল্লাদর্গা সোনাইকুন্ডি গ্রামের সন্তান ছিলেন।
সোমবার সকালে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসির উদ্দিন বিশ্বাস (৭৭) মারা যান।
বিশিষ্ট এ শিল্পপতি নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের মৃত্যুতে দৌলতপুর উপজেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সাথে দৌলতপুর প্রেসক্লাব ডিপিসির সভাপতি আব্দুল আলীম সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কায়সার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব আলী সহ প্রেসক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোক প্রস্তাবে তারা উল্লেখ করেছেন, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের চিরবিদায়ে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি শুধু দৌলতপুরের নয়, তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের সম্পদ। দেশ আজ একজন গর্বিত নাগরিককে হারালো।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও দেশ বরেণ্য এই শিল্পপতি নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ১৯৪৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
তাঁর পিতা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস ও মাতা ছিলেন রহিমা বেগম। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন দ্বিতীয়।
নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ১৯৬৭ সালে আল্লারদর্গা মাধমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে একই কলেজ থেকে বিকম পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কৃষি কাজের মধ্যদিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।
১৯৭২ সালে তিনি তামাক ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে আল্লারদর্গায় নাসির বিড়ি ফ্যাক্টরী গড়ে তোলেন। ১৯৭৭ সালে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে নর্থবেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ মেলামাইন ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, ১৯৯৬ সালে নাসির টোব্যাকো ইন্ডাষ্ট্রিজ, ২০০০ সালে রিডায়িং প্লান্ট ও বিশ্বাস প্রিন্টং এ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেড এবং ২০০২ সালে নাসির গ্লাস ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে মোট ৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
জনহিতকর কাজের মধ্যে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ১৯৮৮ সালে আল্লারদর্গায় নাসির উদ্দিন গার্লস হাইস্কুল স্থাপন করেন এবং ২০০২ সালে তা কলেজে উন্নীত করেন। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর কুষ্টিয়ার ১০০জন করে ছাত্র ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করে আসছেন।
১৯৯১ সালে স্ত্রীর নামে দৌলতপুরে আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করেন। ১৯৯২ সালে মায়ের নামে রহিমা বেগম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে অন্ধত্ব মোচনের জন্য চক্ষু শিবির নামে নিজ অর্থায়নে চিকিৎসা সেবার কাজটি করে গেছেন।
১৯৯৪ সালে দৌলুতপুর উপজেলার বাড়গাংদিয়াতে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশেষ করে, দৌলতপুরের আল্লারদর্গাকে একটি শিল্প এলাকা হিসাবে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এই নাসির উদ্দিন বিশ্বাস।
২০০২ সাল থেকে দৌলতপুরের অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে নিজ অর্থায়নে ১৩টি ইউনিয়নে ১৪টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা করেন।
বর্তমানে ওইসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয়করণ হয়েছে।
নাসির উদ্দিন বিশ্বাস হাজার হাজার মানুষের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি দৌলতপুর, কুষ্টিয়া তথা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানব সম্পদে রুপান্তরিত হয়েছিলেন। দৌলতপুরবাসীর হৃদয়ে তিনি সব সময় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।