গত ৩০ শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তরুণদের অংশগ্রহণে ইয়ুথ পার্লামেন্টের জাতীয় অধিবেশন-২০২২ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বৈদেশিক রেমিটেন্সের ভবিষ্যত জ্বালানী হিসেবে পর্যটন খাতকে প্রধান্য দেওয়া হোক মর্মে আনিত প্রস্তাবের ওপর ইয়ুথ পার্লামেন্ট অধিবেশন সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮টায়।
উদ্বোধনী আয়োজনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সন্মানীত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। এছাড়াও সন্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্যোতি এফ গোমস, নির্বাহী সচিব, বাংলাদেশ ক্যাথোলিক শিক্ষা বোর্ড; কাজী নাহিয়ান, ম্যানেজার- বাংলাদেশ, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস; শরিফুল আনোয়ার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উপদেষ্টা, ইয়ুথ পার্লামেন্ট। আয়োজনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইয়ুথ পার্লামেন্টের সাধারণ সম্পাদক ও ডিউক অব এডিনবার্গ পুরস্কারজয়ী বিবেক মোর এবং সভাপতিত্ব করেন ডায়ানা পুরষ্কারজয়ী ইয়ুথ পার্লামেন্টের সভাপতি ও রানি এলিজাবেথের কমনওয়েলথ ইয়াং লিডার সরকার তানভীর আহেমদ।
উদ্বোধনী অধিবেশনে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া এবং তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়। স্পিকার হিসেবে সোহেল রানা, ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তন্মই তমা, স্পিকার প্যানেল সভাপতি হিসেবে রাজিয়া সুলতানা ইয়ুথ পার্লামেন্ট অধিবেশনটি পরিচালনা করেন।
এসময় ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ডঃ বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ” ইয়ুথ পার্লামেন্টের আয়োজন একটি চমৎকার উদ্যোগ। প্রতিকি অধিবেশন মাধ্যমে তরুণরা সংবিধান ও সংসদের বিধামালা সম্পর্কে জানতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামে তরুণদে মতামত শক্তভাবে তুলে ধরবার জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা উপযুক্ত ব্যবস্থা। ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বয়ে আনবে”।
অধিবেশনের সমাপনী অংশের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডঃ শাহ্ আজম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রশিদুল হাসান।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, প্রফেসর ডঃ শাহ আজম বলেন, “তথ্য প্রযুক্তির যুগে জাতি গঠনে তরুণদের অবদান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম নয়। তরুণদের বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও সামাজিক ধারা ভুলে গেলে চলবে না। ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা জাতীয় উন্নয়নের নতুন দিশা খুলে দেবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, “তরুণদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে শীঘ্রই জাতীয় সংসদের বিশেষ শাখা খোলা হবে।”
ইয়ুথ পার্লামেন্টের অধিবেশন-২০২২ উপলক্ষ্যে ৫ দিন ব্যাপী চলে কর্মশালা, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ও অনুশীলন পর্ব। এ সংসদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয় জান্নাতুন নাঈম, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন ইনজামামুল হক।
দিনব্যাপী এ অধিবেশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার তরুণরা নিজ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে “বৈদেশিক মুদ্রার ভবিষ্যৎ জ্বালানী হিসেবে পর্যটন খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে” সাধারণ প্রস্তাবের ওপরে নিজেদের অভিমত ও যুক্তির মাধ্যমে সংসদকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। অধিবেশনে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যগণ ২ বার ওয়াক আউট করেন। মাননীয় প্রতিকি পর্যটন প্রতিমন্ত্রী তাশফিয়া সারা চৌধিরী প্রস্তাবটি সুপারিশকৃত আকারে মাননীয় স্পিকারের কাছে ভোটে দেবার অনুরোধ করেন। মাননীয় স্পিকার প্রস্তাবটি কন্ঠ ভোটে দিলে তা পাশ হয় তবে বিরোধী দলের প্রতিবাদের পুনরায় বিভক্তি ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও সরকারি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এরপরে পুনরায় বিরোধী দলের আপত্তিতে মাননীয় স্পিকার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং দেন। ওই ভোটের ফলাফলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।
অতিথিরা বলেন ইয়ুথ পার্লামেন্টের প্রস্তাবগুলোকে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা গেলে ও জাতীয় পর্যায়ে বিবেচনা করা গেলে অনেক নতুন আইডিয়া উঠে আসবে। এছাড়াও ইয়ুথ পার্লামেন্টের বিল গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য জাতীয় সংসদে একটি আলাদা বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা সকলেই এই ধরনের আয়োজনের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
জাতীয় এ অধিবেশনের অংশীদারগণ হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক অফ ইয়ুথ ভলান্টিয়ার্স সোসাইটি, ইয়ুথ পাওয়ার কমিউনিটি (YPC), কানেক্টিং ড্রিমস ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া, ইয়ুথ 360, SUNFO গ্লোবাল শ্রীলঙ্কা এবং আনটোল্ড লাইফ স্টোরি। এছাড়াও মিডিয়া অংশীদার হিসেবে দ্য মুসলিম টাইমস এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড যুক্ত ছিলো।
ইয়ুথ পার্লামেন্ট ২০১৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে তরুণদের এসডিজি-১৬ তে সক্রিয় অবদান রাখতে নেতৃত্ব দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সভাপতি বলেন ” ২০৪১ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হবে। তাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়তে ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা চাই উন্নত দেশের মত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কক্ষেও ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা করা হবে”।