ইউনিয়ন পরিষদ,থানা,উচ্চ আদালতের দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। লাঙ্গল নিয়ে জমির উপর গেলেই লাঠিসোটা,হাসুয়া,রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে হামলা করে প্রতিপক্ষ। ভূমিদস্যূর দাপটে অসহায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাধীন আমদহ গ্রামের ৩ কৃষক। প্রাণভয়ে নিজ নামীয় জমিতে আবাদ করতে পারছেন না ভুক্তভোগী আয়েন উদ্দীন। তিনি জানান, দৌলতপুর উপজেলার আমদহ মৌজায় ১৩৭৪ খতিয়ানে ৪৭৭ দাগে আইন উদ্দীন মন্ডলের ২৭ শতক, এক্ই মৌজায় ১২৩৩ খতিয়ানে ৭৪০ দাগে তার চাচাতো ভাই আকবর হোসেনের ৩৭ শতক, ১৩০৭ খতিয়ানে ২৫১৯ ও ২৫১১ দাগে প্রতিবেশী তজেল মন্ডলের ৮৬ শতক জমি রয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তারা এসব জমি ভোগদখল করে আসছেন। তফসীলি সম্পত্তি প্রিয়েমশন মামলা নং ৭৪/১৯৬৫ এর রায়ের আলোকে ভোগ দখল করে আসছেন। প্রিয়েমশন মামলার মাধ্যমে প্রাপ্ত এস এ খতিয়ানের জমি ভুলক্রমে মকছেদ আলীর নামে আর এস রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ায় ইয়াদ আলী,আছের বিশ^াস, আছিয়া খাতুনের ওয়ারেশ এই ৩ কৃষক বিপাকে পড়েছেন। এসএ খতিয়ান মোতাবেক এসমস্ত জমির মালিক ছিলেন হাজি মুন্সি মন্ডল। তিনি ২ টি দলিলের মাধ্যমে মকছেদ আলী বরাবর বিক্রি করেন। একই খতিয়ান ও দাগের পাশ আইলা প্রজা ইয়াদ আলী,আছের বিশ^াস প্রিয়েমশন মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত প্রিয়েমশন মামলা নং মিস ৭০/৬৫,মিস ৭১/৬৫,মিস ৭২/৬৫,মিস ৭৩/৬৫,মিস ৭৪/৬৫,মিস ৭৫/৬৫,৭৬/৬৫ ও ৭৮/৬৫। উক্ত মামলার রায়ের আলোকে তফশীলী জমির দখল গ্রহণ করেন বাদীপক্ষ। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে মকছেদ আলী আপিল করেন। যার নং মিস আপিল ৪০/১৯৬৬। দীর্ঘ শুনানীনান্তে দোতরফা সূত্রে আপিল না মঞ্জুর হয়। এ প্রক্ষিতে হাইকোর্টে সিভিল রিভিসন ৬০/১৯৬৮ দায়ের করেন যা ৮/৮/১৯৭৭ তারিখে ডিসচার্জ হয়। নালিশী জমি আদালত মাধ্যমে দখল প্রাপ্ত হয়ে বাংলা ১৪২৯ সাল পর্যন্ত খাজনা দাখিল করে আসছেন ভুক্তভোগী মৃত কাইমুদ্দিনের ছেলে আইনদ্দিন,মইনদ্দিন, ইয়াদ আলীর ছেলে আকবর আলী,মৃত আছের আলীর ছেলে জালাল উদ্দীন ও আছিয়া খাতুনের ওয়ারেশগণ।
কিন্তু নালিশী জমি জবর দখলের অপচেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। মৃত মকছেদের ছেলে মোজাম্মেল, আমজাদ(৬৩)মনিরুল(৫৭),মহাসিন(৬০),মুকাব্বরের ছেলে মোহন(২৫)সহ ২০/৩০ জনের সংঘবদ্ধ চক্র কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে দৌলতপুর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর’২০ আইনদ্দিনের ৩ বিঘা ধঞ্চে কেটে ৩ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করে প্রতিপক্ষ। মোজাফ্ফরের ছেলে বিদ্যূত(৩০) প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল দেখিয়ে কৃষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। প্রতিপক্ষ মোজামে¥ল হক বাদী হয়ে ১৩০৭,১২৩৩,১৩৭৪ আর এস খতিয়ানের ১৫ টি দাগের ৫.৭৩ একর জমির মালিকানা দাবী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং দেং ৯/২০২১। দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ অর্ডার ১ রুলসহ ১৫১ ধারার বিধানমতে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের প্রার্থনা করেন। নিষেধাজ্ঞার দরখাস্তে আনীত ৫.৭৩ একর জমির ১৬ আনা দাবীর সমর্থনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাবী প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল’২১ তারিখে বাদীপক্ষের দরখাস্তটি দোতরফাসূত্রে না মঞ্জুর করেন কুষ্টিয়ার যুগ্ম জেলা জজ শাহনাজ নাসরিন খান।
গত ১৪ নভেম্বর’২২ তামাকের চারা রোপণ করতে গেলে একই এলাকার মোজাফ্ফরের ছেলে বিদ্যুত হোসেন,ফকা মুহুরীর ছেলে মিজানুর,জমির আইলের উপর উপস্থিত হয়ে জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে তাদের গালিগালাজ করেন এবং খুন জখমের উদ্দেশ্যে ধাওয়া করেন। পিয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে গত ৩১ আগষ্ট ও ৭ জুলাই নোটিশের মাধ্যমে হাজির হওয়ার নোটিশ দেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা বুলবুল। কিন্তু ২য় পক্ষ হাজির হয়নি। জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে,দৌলতপুর উপজেলাধীন আমদহ মৌজার পুরাতন ৮১২ নতুন ১১৭৪ এসএ ১১৭৮ খতিয়ানের এস এ ৩৮০ নং দাগে .৩৭ একর জমি হাজী মুন্সি মন্ডলের নামে প্রচলিত ছিল। নালিশী জমি ভোগকরাকালীন .৩৭ জমি পুত্র মকছেদ আলী বরাবর বিক্রয় করেন। একই খতিয়ানের পাশ আইলা জমির প্রজা ইয়াদ আলী কুষ্টিয়ার ২য় মুনসেফ আদালতে একটি প্রিয়েমশন মামলা দায়ের করেন । যার নং মিস ৭১/৬৫। ইয়াদ আলী মৃত্যু বরণ করেন। তার ওয়ারেশ মামলার পক্ষভুক্ত হয়ে প্রতিযোগীতা করলে ৩১/৩/১৯৭৮ তারিখে আদালতের মাধ্যমে .৩৭ একর জমির দখল প্রাপ্ত হন। এই .৩৭ একর জমি ভুলক্রমে ১২৩৩ খতিয়ানে আর এস ৪৭০ দাগে মকসেদ আলীর নামে আর এস রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর এস রেকর্ড মূলে এই জমির মালিকানা দাবী করেন মকসেদ আলীর ওয়ারেশগণ। মৃত ইয়াদ আলীর ওয়ারেশগণ বাদী হয়ে দৌলতপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি রেকর্ড সংশোধন মামলা দায়ের করেন যার নং ৫/২০। আমদহ মৌজার এস এ ২৭৫৬ খতিয়ানের এস এ ১৬৫২ দাগের .৩৫ একর জমি হাজী মুন্সি মন্ডলের নামে প্রচলিত ছিল্ তিনি উক্ত জমি পুত্র মকছেদ আলী বরাবর বিক্রি করেন। একই দাগের পাশ আইলা জমির প্রজা আছের উদ্দীন বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রিয়েমশন মামলা দায়ের করেন যার নং মিস ৭০/৬৫। গত ২৯/০৩/১৯৬৬ তারিখে আদালতের মাধ্যমে উক্ত জমির দখল প্রাপ্ত হন আছের আলী। গত ২৯/০৩/৭৮ তারিখে মিস ৭৪/৬৫ মামলায় আদালতের মাধ্যমে একই মৌজার এস এ ১৭৮৩ দাগের .৭৫ একর ও এস এ ১৭৮৫ দাগের .১১ একর একুনে .৮৬ একর জমির দখর প্রাপ্ত হন। মিস ৭৮/৬৫ মামলা প্রতিযোগিতা করে আদালতের মাধ্যমে একই তারিখে এস এ ২০৪১ দাগের .৬০ একর জমির দখলপ্রাপ্ত হন। আর এস রেকর্ডের পূর্বেই আছের উদ্দীন মৃত্যুবরণ করেন। ৩ মামলার মাধ্যমে প্রাপ্ত ১.৮১ একর জমি আছের আলীর ওয়ারেশগণ ভোগদখল করতে থাকেন। ভুলক্রমে মকছেদ আলীল নামে এর এস রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর আছের আলীর ওয়ারেশগণ আদালতে একটি বিভাগবন্টন মামলা দায়ের করেন। যার নং দেং ২৩২/২০১৯। মহামান্য হাইকোর্টের রায় অমান্য করে জমি জবর দখলের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানান এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।