কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বড়গাংদিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের বিরুদ্ধে গোপনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়োগ সম্পর্কে জানেন না বলে অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক। পূনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পত্রিকা দুটি এলাকায় আসে না। বিষয়টি অনেকে জানেনা। আমি যেই সার্কুলার দিয়েছি, সেটা সাফিসিয়েন্ট হয়নি। ভালো পত্রিকায় আমি নতুন করে আবারও সার্কুলার দিবো। তারপর পর্যাপ্ত দরখাস্ত জমা হলেই আমি নিয়োগ দিবো। তার আগে কাউকে নিয়োগ দিবো না। সরকারি বিধিনিয়ম অনুযায়ী বৈধভাবে, যৌথভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।
নিয়মানুযায়ী নিয়োগ দিতে হলে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডাকতে হবে। এই সভায় কয়জন নিয়োগ হবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ওই দিনই পেপার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এ ছাড়া একটি বাছাই কমিটি করবে এবং একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ বানিজ্য করতে গিয়ে ধরা পড়েছে প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক মানবজমিন ও স্থানীয় দৈনিক বজ্রপাত পত্রিকায় পত্রিকায় কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক ও পরিছন্নতাকর্মী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে এসব পত্রিকা এলাকায় আসে না। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি নোটিশ বোর্ড ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে টাঙানো হয়নি। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল গত ৩ জানুয়ারি। অনেকেই আবেদন করতে পারেন নি।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা বড়গাংদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে কেউ জানে না। আমরাও জানি না। তাই গ্রামের অনেক যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেননি। লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিয়ে প্রধান শিক্ষক শুধু নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের আবেদন করিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন আজিজুল মাস্টার। তিনি নিয়োগ বানিজ্য করার জন্য গোপনের পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু স্থানীয়রা জেনে গেছেন যে, পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিয়োগ দেয়ার জন্য এ গোপনীয়তা।
অভিযোগকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বানিজ্য করছে প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক। গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কারণে অনেক আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করতে পারেন নি। এমনকি, পরবর্তিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রকাশিত পত্রিকার কপি প্রধান শিক্ষকের কাছে বেশ কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থী চাইতে গেলেও খবরের কপি দেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশ্য উক্ত তিনটি পদের মধ্যে দুটি প্রধান পদে উন্নয়নের সরকার আওয়ামী ঘরানার বাইরের মতাবলম্বী দুটি পরিবার থেকে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার চক্রান্ত। ইতিমধ্যে এই অনিয়মের ব্যাপারটি দৌলতপুর নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও এই সংক্রান্ত কোনো বিষয় আমাকে জানানো হয় নি। ম্যানেজিং কমিটির অনেক সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করার চেষ্টা করছে। ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পূনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হোক।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। এখন শোনা যাচ্ছে গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করার চেষ্টা করে ধরা খেয়েছে হেড স্যার। পূনরায় বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হোক।
দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহম্মদ আবু সালেক বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে পূনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে বলেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।