মাত্র ৭০০ টাকা মাসিক বেতনে একনাগাড়ে ১২ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালন করে চলেছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ গ্রামের মৃত ঈমান আলীর পুত্র আজগর আলী। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্যালয় কমিটি নতুন করে নৈশ প্রহরিসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। আগামীকাল শনিবার সেই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এদিকে নৈশ প্রহরী আজগর আলীর ভাগ্যে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে যে নৈশ প্রহরী পদে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যের একজন নিকটাত্মীয় নিয়োগ পাচ্ছেন। নিয়োগের জন্য আজগর আলীও আবেদন করেছেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বিভিন্ন সূত্রে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে আজগর আলীর পদটি থেকে তাকে অচিরেই সরে যেতে হচ্ছে বলে ব্যাপক ধারণা প্রকাশ পাচ্ছে। এদিকে বর্তমান নৈশ প্রহরী আজগর আলী একজন দরিদ্র মানুষ। এলাকার মানুষের সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে। দীর্ঘ ১২ বছর মাস্টার রোলে চাকরি করার পর এভাবে একটি সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরিচ্যুত হয়ে যাওয়া অবাক করা ঘটনা। নিয়মিত তিনি বিদ্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন। নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্থগিত করে সেখানে আজগর আলীকে নিয়োগ দেবার উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞ সহকারি জজ আদালত-এ একটি মামলা করেছেন যার নম্বর দেং ১৩১/২০২২।
এই মামলার ইনফরমেশন স্লিপসহ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করা হলেও আগামীকাল নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ বহাল আছে।
এ ব্যাপারে জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজগর আলীর ১২ বছর নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন পরিবর্তিত সরকারি নিয়ম-নীতি প্রজ্ঞাপন এবং চাকরিবিধি অনুসারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আজগর আলীর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে তার সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু তাকে বহাল রাখার বিষয়ে কোন ইতিবাচক কর্মকান্ড গ্রহণ করবার যথাযথ ক্ষমতা তার নেই বলে তিনি জানান। তিনি বিদ্যালয় কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ অন্যান্যদের উপরে দায়িত্ব চাপানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে আজগর আলীর বিষয়ে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতিরেকে হুট করে লোকবল নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে, অমানবিকভাবে, স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়ে বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হতে দেখে বিদ্বানুরাগী মহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
হতভাগ্য আজগর আলী বলেন, এই স্কুলের পিছনে তিনি তার জীবন এবং যৌবন দান করেছেন। কিন্তু এখন তাকে কায়দা করে বিদ্যালয় থেকে বিনা কারণে তাড়িয়ে দেবার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের কাছে তার অনুরোধ, দীর্ঘদিন পদে চাকরি করবার পরেও তাকে সরিয়ে দেয়ার যে অমানবিক কাজটি হতে দেখছেন সে বিষয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন।